রিসান বিশ্বাস ডন, প্রকৌশলী :
ছাদের উপর বাগান করা বা গাছ লাগানো নতুন কোন বিষয় নয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জমি সংকট দেখা দেওয়ায় ছাদের উপর বাগান করা এখন অনেক জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও আজকাল ছাদ বাগানের ব্যাপারটা জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে ব্যাপার হচ্ছে যেন তেন ভাবেই বাগান করে ফেললে সমস্যায় পড়তে হবে। বাগান করার আগে আপনাকে বাগান এর কারনে ভবনে যেসব স্ট্রাকচারাল ইমপ্যাক্ট আসবে ,সে ব্যাপারে একজন এক্সপার্ট ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে , নাহলে দেখা যাবে পুরো ভবনের উপরই এর ইমপ্যাক্ট আসবে।
যথাযথ গাইডলাইন অনুসারে বিভিন্ন লোড যেমনঃ ডেড লোড,লাইভ লোড , ভূমিকম্প, উইন্ডের লোড BNBC (Bangladesh National Building Code) অনুযায়ী মেনে ডিজাইন করতে হবে।
ছাদে বাগান করার সুবিধাসমূহঃ
১। এনার্জি সঞ্চয় করে রাখতে সাহায্য করে।
২। বিল্ডিংয়ের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৩। আবহাওয়াগত সমস্যায় ছাদকে সংরক্ষণ করে।
৪। শব্দ প্রতিবন্ধক।
৫। আগুন প্রতিরোধক।
৬। শহুরে জায়গায় তাপ হ্রাস করে।
৭। বৃষ্টির পানি ধরে রাখে।
৮। বায়ু পরিষ্কার রাখে।
৯। বাস্তুসংস্থান আবাস সৃষ্টি।
১০। ভবনের ভিতরেই বিনোদনমূলক স্থান।
বাগান ও স্ট্রাকচারাল ইমপ্যাক্টঃ
এত সুবিধার মধ্যে ঝুঁকি ঝামেলাও কম নয়।
বাগান করার কারণে ঠিকমত ডিজাইন না করা হলে ভবন হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।
পানি জমে থাকাও ভবনের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।
ওয়াটার প্রুফিং না থাকার কারণে ভবনের কাঠামোগত ক্ষতি হতে পারে।
আবার কী ধরণের উদ্ভিদ লাগানো যাবে সেটা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।
কি ধরণের উদ্ভিদ লাগানো যাবে তার উপর ভিত্তি করে তিন ধরণের সিস্টেম রয়েছে।
১। বিস্তৃতঃ
মাটির পুরুত্ব সাধারণত ০.৮”-৬” হয়। এটি বিনোদনমূলক না হয়ে বরং বাস্তুসংস্থান হিসেবে বেশি মানানসই। এটি খুব কম খরচে করা যায় এবং যে উদ্ভিদ খুব কম বাড়ে বা বড় হয়, শুধু সেগুলোই লাগানো হয়। যেমনঃ ঘাস।
২। আধা বিস্তৃতঃ
এটির ধারণা মোটামুটি আগের সিস্টেমের মতই। এখানে মাটির পুরুত্ব ৪”-৮” হয়ে থাকে। এখানে ছোট ছোট ফুলের গাছ বা পাতাবাহার জাতীয় উদ্ভিদ ঘাসের সাথে সাথে লাগানো যেতে পারে।
৩। নিবিড়ঃ
স্বাভাবিকভাবে মাটিতে যে ধরণের বাগান করা হয়, ঠিক সেরকমই বাগান এ সিস্টেমে করা হয় অর্থাৎ কার্বনকপির মত। মাটির পুরুত্ব অবশ্যই ৮” এর বেশি হবে। এখানে বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদও লাগানো যেতে পারে। এর সাথে সুইমিংপুল বা ওয়াটার ফল ইত্যাদি দিয়ে বিনোদনমূলক স্থানে পরিণত করা যায়। এটিতে সবচেয়ে খরচ বেশি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করাও কষ্টসাধ্য।
যেভাবে ছাদের উপর মাটির স্তর ব্যবহার করা হয়ঃ
সাধারণত যে স্তরগুলো ব্যবহার করা হয় তা নিম্নরূপঃ-
ছাদের স্ল্যাবের ঠিক উপরে পানিরোধী স্তর দিতে হবে। উদ্ভিদের মূল যেন এই স্তরে না যেতে পারে, সেজন্যে এরপরেই একটি প্রতিবন্ধকতার স্তর দিতে হবে যার পুরুত্ব ০.০৩” – ০.০৪”। এরপর এক ধরণের ফেব্রিক ব্যবহার করতে হয় যা নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণের সময় নিচের স্তরগুলোকে রক্ষা করবে। এটির পুরুত্ব ০.২৫”। এছাড়া এই স্তরের পানিধারণ ক্ষমতা আছে। ঠিক এর পরেই ড্রেনেজ স্তর বসাতে হবে যা উদ্ভিদের মূল থেকে পানি নিষ্কাশন করতে পারে আবার শুষ্ক মৌসুমে উদ্ভিদের জন্যে আদ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। এই ড্রেনেজ স্তরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্যে একটি ফিল্টার ফেব্রিক ব্যবহার করা হয়। এরপর ইনসুলেশন স্তর দিতে হয় যা নিচের স্তরকে মাটির সংস্পর্শ থেকে ঠিক রাখে। সর্বশেষ মাটি দ্বারা উদ্ভিদ লাগাতে হবে। তবে মাটিটি কিরূপ হবে তাও নির্ধারণ করতে হবে। যেমনঃ সামান্য হলেও সিল্ট এবং ক্লে কনটেন্ট থাকতে হবে, সেটেলমেন্ট এড়ানোর জন্য কিছু অর্গানিক কনটেন্টও থাকতে পারে, লাইট ওয়েট হতে হবে, পানি ধরে রাখার ক্ষমতা থাকতে হবে, ওয়েল গ্রেডের হতে হবে ইত্যাদি। উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য ভালো কেমিক্যাল প্যারামিটারগুলিও এই মাটিতে থাকা জরুরী।
ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট ড্রয়িং দেওয়ার পর স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার একজন উদ্ভিদবিদের সাথে আলোচনা করে নিতে হবে যেতে মাটির পুরুত্ব যথাযথ থাকে।
নির্বাহী সম্পাদক : মহসিন রায়হান। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আকরাম হোসাইন। সহ-ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : ওমর ফারুক। আইন উপদেষ্টা : মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, এডভোকেট বাংলাদেশ সু্প্রিম কোর্ট ঢাকা।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ২১৯ মাজার রোড, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬।
📱 হটলাইন : ০১৭১৩৯২৬২৭৭, ০১৭১০১৪২০১৭।
📧 Email : khoborerdakghar@gmail.com
“দৈনিক খবরের ডাকঘরে” প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখক/প্রতিনিধির। আমরা লেখক/প্রতিনিধির চিন্তা ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল সব সময় নাও থাকতে পারে । তাই যে কোনো লেখার জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। ডেইলি খবরের ডাকঘর কতৃপক্ষ।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত খবরের ডাকঘর নিউজ. কম ©২০১৮ ||
Leave a Reply