প্রতীকী ছবি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ভারতীয় ২০ সৈন্যের প্রাণহানির পর দেশটিতে চীনকে বর্জনের ডাক উঠেছে। দু’দিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চীনের পণ্য, জাতীয় পতাকা ও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ছবিতে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ভারতীয়রা।
কিন্তু ভারতে বিশাল বাজার দখলে রাখা চীনকে আদৌ কি ভারতীয়দের পক্ষে বয়কট করা সম্ভব? পণ্যের রমরমা বাণিজ্যের পাশাপাশি ভারতীয় বিভিন্ন কোম্পানিতে রয়েছে চীনের বিশাল বিনিয়োগ। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, সেই বিপুল বিদেশি বিনিয়োগ উপেক্ষা এবং সর্বক্ষেত্রে চীনা পণ্য বর্জন করার সাহস কি দেখাতে পারবে ভারত?
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডকে (বিএসএনএল) চীনা পণ্য ব্যবহার না করতে দেশটির কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া রেলওয়ের একটি প্রকল্পে ৫০০ কোটি রুপির টেন্ডার পাওয়া চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিলের গুঞ্জন উঠেছে।
এ ধরনের দুই একটি ছোটখাটো সিদ্ধান্ত নেয়া এবং পুরো চীনকে বয়কট করার মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে বলে মনে করেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এসব পদক্ষেপ একটি বিরাট সিদ্ধান্তের ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। সামগ্রিকভাবে চীনকে বর্জন করে চলা প্রায় অসম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিনোদন থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সব ক্ষেত্রে রয়েছে চীনের আধিপত্য।
দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়া বলছে, চীনা কোন সংস্থার কত বিনিয়োগ রয়েছে এবং কীভাবে তারা ভারতের বাজার দখল করেছে সেটি জানতে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে ভারতীয় সংস্থা ‘গেটওয়ে হাউস’।
দেশটির কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ক্ষমতাসীন সরকার, বিভিন্ন শেয়ার বাজার, সরকারের বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত পোর্টাল এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে তথ্য নিয়ে ওই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়।
এতে দেখা যায়, ভারতের ৩০টি ‘ইউনিকর্ন’ সংস্থায় অন্তত ১৮টিতে চীনের সরাসরি বিনিয়োগ রয়েছে।বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা যেসব সংস্থার মূল্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি, তাদের এই ‘ইউনিকর্ন’ গোত্রে ফেলা হয়। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই ইউনিকর্নভুক্ত ১৮টি সংস্থায় চীনের বিভিন্ন সংস্থার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। কোন সংস্থার কোথায় কত বিনিয়োগ রয়েছে সেসবও তুলে ধরেছে গেটওয়ে হাউস।
কিন্তু এর বাইরেও ১০০ কোটির ডলারের কম মূল্যের সংস্থায় অসংখ্য বিনিয়োগ রয়েছে চীনা কোম্পানিগুলোর। আবার পণ্য, পরিষেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও চীনা কোম্পানিগুলোর আধিপত্য দিনে দিনে বাড়ছে।
গেটওয়ে হাউসের ওই সমীক্ষা বলছে, ই-কমার্স, ফিনটেক, মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া, অবকাঠামো এবং পরিবহনের মতো অন্তত ৭৫টি সংস্থায় চীনা বিনিয়োগ রয়েছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিষেবা ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা থাকায় এসব খাতে বিনিয়োগ করে চলছে চীনা কোম্পানিগুলো।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশটিতে তিন শতাধিক চীনা পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করে বলেছে, এসব পণ্য আমদানির প্রয়োজনীয়তা নেই। খেলনা, রাসায়নিক, খেলাধুলার সরঞ্জাম, প্ল্যাস্টিকের সামগ্রী, কাগজ ও বিভিন্ন নিত্য পণ্যের এই তালিকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দফতরে পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাব অনুমোদন করলে চীনা এসব পণ্যের আমদানি বন্ধ হবে।
গত কয়েক বছরে ডিজিটাল দুনিয়ায় ভারতে বিশাল বাজার তৈরি করেছে চীন। চীনা বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির বাজার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ভারতে; এর মধ্যে রয়েছে ইউসি ব্রাউজার, শেয়ার ইট, টিকটক, ভিগো ভিডিওর মতো ব্যাপক জনপ্রিয় অ্যাপ।
গেটওয়ে হাউসের সমীক্ষা বলছে, জনপ্রিয়তায় ভিডিও শেয়ারিংয়ের অন্যতম মাধ্যম ইউটিউবকে গত পাঁচ বছরে ছাড়িয়ে গেছে টিকটক। শুধুমাত্র ভারতেই চীনা এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারকারী রয়েছে প্রায় ২০ কোটি।
তুলনামূলক সস্তা এবং সহজলভ্য হওয়ায় ভারতের মোবাইল ফোনের বাজারেও চীনা কোম্পানিগুলোর ব্যাপক আধিপত্য রয়েছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চীনের মাত্র দুটি ফোন কোম্পানি- ওপো এবং শাওমি ভারতের ৭২ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে এভাবে বয়কট কিংবা বর্জনের মাধ্যমে চীনের ওপর চাপ তৈরির প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। কারণ চীনের বিশাল বিনিয়োগ, সস্তা মূল্যের পণ্য ভারতীয় কোম্পানি ও নাগরিকদের জীবনে আস্টেপৃষ্ঠে রয়েছে। বয়কট করার আগে দেশেই পণ্য উৎপাদন ও সস্তায় ভোক্তার কাছে সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি দেশীয় কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিয়ে কাজের সঙ্গে আরও বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সামিউল্লাহ সামি। নির্বাহী সম্পাদক : মহসিন রায়হান। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আকরাম হোসাইন। সহ-ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : ওমর ফারুক। আইন উপদেষ্টা : মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, এডভোকেট বাংলাদেশ সু্প্রিম কোর্ট ঢাকা।
প্রধান কার্যালয় : ২১৯ মাজার রোড, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬। বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএকে টাওয়ার (৯ম তলা), প্লট নং ১/এ, নিশাত নগর, তুরাগ, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।
📲 মোবাইল : ০১৭১৩৯২৬২৭৭,০১৭১০১৪২০১৭।
📧 Email : khoborerdakghar@gmail.com
“দৈনিক খবরের ডাকঘরে” প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখক/প্রতিনিধির। আমরা লেখক/প্রতিনিধির চিন্তা ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল সব সময় নাও থাকতে পারে । তাই যে কোনো লেখার জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। ডেইলি খবরের ডাকঘর 🗞
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত খবরের ডাকঘর. কম ©২০১৮ -২০২১||
Leave a Reply