সফর মিয়া,নবীনগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামে জমির পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের বাড়িতে গিয়ে অভিনব কৌশলে নিজের শরীরে নিজেই চাকু দিয়ে আঘাত করে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মিথ্যা অভিযোগ এনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দেওয়ার অভিযোগ।এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
জানাযায়, নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম গত কয়েক বছর আগে একই গ্রামের খায়ের মিয়ার নিকট গোপালপুর মৌজার ৫২১১ দাগের ১৯ শতক জায়গা বিক্রী করেন, দলিলে খায়ের মিয়া লিপিবদ্ধ করেন ৩৬ শতক।
এরপর থেকেই ৫২১১ দাগের সাথে থাকা ৫২১২ দাগের জমি কৌশলে তার আয়েত্তে নিতে বিভিন্ন ফন্ধিফিকির করতে থাকে। ৫২১২ দাগের জায়গা খারিজ করা আছে প্রবাসে থাকা নুরুল ইসলামের দুই ভাই সাত্তার মিয়া ও আবন মিয়ার নামে। ওই জমি নিজের দাবী করে খায়ের মিয়া থানা পুলিশ সহ কয়েক দফা গ্রাম্য শালিস করেন। কোন অবস্থাতেই ওই জায়গা নিজের নামে নিতে না পেরে গত ৩ সেপ্টেম্বর খায়ের মিয়া প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দ্যেশে ফজর নামাজের সময় নুরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে নিজের শরীরে নিজেই একটি চাকু দিয়ে আঘাত করে আহত হয়, এই সংবাদ খায়ের মিয়ার বাড়িতে পাঠানো হলেও কোন লোকজন না আসায়, নুরুল ইসলামের বাড়ির লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর খায়ের মিয়ার স্ত্রী বাদী হয়ে সাত্তার মিয়াকে প্রধান আসামী করে তার তিন ভাই ও ভাতিজাসহ ৫জনের বিরুদ্ধে নবীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গত বৃহস্পতিবার চার জন জামিনে এসেছে। জামিনে বের হয়ে আসার পর থেকে চরম আতংকে রয়েছে নুরুল ইসলামের পরিবার। আবার নতুন করে কি অঘটন ঘটায় খায়ের মিয়া।
সরেজমিনে যাওয়ার পর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল ইসলামের স্ত্রী বলেন, ফজরের নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এসময় খায়ের মিয়া আমাকে দেখতে পেয়ে জানতে চান আমার স্বামী কোথায়,আমি জানায় তিনি বাথ রুমে গেছে, কেন ডাকতেছেন। উত্তরে খায়ের মিয়া বলেন, জমি না দিলে তোমাদের বাড়িতে আমার জীবন দিয়ে দেব, এই কথা বলেই খায়ের মিয়া কোমর থেকে একটি চাকু বের করে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে আঘাত করতে থাকে। তখন আমি চিৎকার শুরু করি, আমার দেবররা ঘুমিয়ে ছিলো, আমার চিৎকারে তারাসহ আশপাশের লোকজন জমায়েত হয়।
সাত্তার মিয়া জানান, বড় ভাবীর চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখি খায়ের মিয়া চাকু দিয়ে নিজের শরীরে আঘাত করতেছে, এই দৃশ্য দেখে দৌড়ে গিয়ে আমার প্রতিবেশি জহিরুলকে ডেকে নিয়ে আসি এবং রিজিক মিয়াকে আসার জন্য খবর পাঠাই, এবং খায়ের মিয়ার বাড়িতে খবর দেওয়ার পর কোন লোকজন না আসায় আমার দুই ভাতিজা সহ জহিরুল তাকে নবীনগর হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি আরো আরও বলেন, ১৯ বছর ধরে আমরা দুই ভাই প্রবাসে থাকি, ৫২১২ দাগের জায়গা আমাদের নামে খারিজ করা আছে, সেই জায়গা খায়ের মিয়া নিজের নামে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল ও ফন্দি ফিকির করেছে। আমার স্ত্রী ও ভাবীর নামেও মামলা দিয়েছিলো। খায়ের মিয়া বাড়িতে এসেছে, আবারও কি অঘটন ঘটিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের ফাঁসিয়ে দেয় আমরা সেই আতংকে আছি।
মামলার সাক্ষী জহিরুল বলেন, ভোর ৬টার দিকে সাত্তার ভাই চিৎকার করে আমাদের বাড়িতে এসে জানায়, খায়ের মিয়া আমাদের বাড়িয়ে গিয়ে নিজের শরীরে চাকু দিয়ে আঘাত করছে। রিজিক মিয়াকে খবর দাও। এই কথা শুনে আমি রিজিক ভাইকে ফোনে এই ঘটনা জানিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খায়ের মিয়া মাটিতে শুয়ে আছে।
অপর স্বাক্ষী রিজিক মিয়া জানান, জহিরুলের ফোন পেয়ে নুরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে ওই বাড়ির মানুষের কাছে জানতে পারি জমি না পাওয়ার কারনে নিজেই নিজের শরীরে চাকু দিয়ে আঘাত করেছে খায়ের মিয়া। এ বিষয়টি খায়ের মিয়ার স্ত্রীকে জানালে তিনি বলেন, মরলে মরুক আমাদের কিছু বলার নেই। পরে সাত্তারের ভাতিজা সোহাগ মিয়াসহ কয়েকজনকে দিয়ে আমরা তাকে নবীনগর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। হাসপাতালে খায়ের মিয়াকে দেখতে গিয়েছিলাম,তখন তিনি বলেছেন ৯৮ হাজার টাকা তার পকেটে ছিলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিবেশি বলেন, কাজে যাওয়ার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধোয়ার জন্য টিউবওয়েলে যাওয়ার পর দেখতে পাই খায়ের মিয়া নিজের শরীরে নিজেই চাকু দিয়ে ঘাই দিতেছে, আর বলতেছে আমাকে জমি না দিলে এই বাড়িতে মরে তোদের ফাঁসিয়ে দিয়ে যাবো।
গ্রামবাসী জানান, এই ঘটনা সিনেমাকেও হার মানাবে। আমরা জীবনেও শুনি নাই যারা শালিস ভেঙ্গে চলে যায়, তারা দুইদিন পর আবার প্রতিপক্ষকে একা নিজেদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে ঘায়েল করার জন্য এই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। কোন ঘটনা মিমাংসা করার জন্য কেউ কারও বাড়িতে ফজরের সময় যায় এই প্রথম শুনলাম। যারা তাকে হাসপাতাল নিলো তাদেরকে উল্টো আসামী দিলো।
খায়ের মিয়া বলেন,আমি তাদের কাছ থেকে জমি কিনেছি ৩৬ শতক, যে জমি দলিল করে দিয়েছে সেই জমিতে জায়গা আছে ১৯ শতক,বাকি জায়গা আরেকটি দাগে রয়েছে, সেই জায়গা তারা দলিল করে দেওয়ার কথা বলে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে আমাকে তারা চাকু দিয়ে আঘাত করে জখম করেছে। আমার কাছ থেকে ১লক্ষ ৮০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নবীনগর থানার এস আই মনিরুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ভোর বেলায় ঘটনাটি ঘটেছে, ওই সময় মানুষ ঘুমিয়ে ছিলো,এটি একটি বিবেচ্য বিষয়, মামলার তদন্ত চলছে, আজ শনিবার ঘটনাস্থলে তদন্ত করতে আবারও যাবো। তদন্ত শেষ হলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সামিউল্লাহ সামি। নির্বাহী সম্পাদক : মহসিন রায়হান। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আকরাম হোসাইন। সহ-ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : ওমর ফারুক। আইন উপদেষ্টা : মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, এডভোকেট বাংলাদেশ সু্প্রিম কোর্ট ঢাকা।
প্রধান কার্যালয় : ২১৯ মাজার রোড, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬। বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএকে টাওয়ার (৯ম তলা), প্লট নং ১/এ, নিশাত নগর, তুরাগ, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। 📲 মোবাইল : ০১৭১৩৯২৬২৭৭, ০১৭১০১০১৬৯৯। বিজ্ঞাপন : ০১৭৭ ৯৭৪৬৬০৭ ☎️ ফোন : +৮৮০৯৬৩৮১৯২৪।
📧 Email : khoborerdakghar@gmail.com
“দৈনিক খবরের ডাকঘরে” প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখক/প্রতিনিধির। আমরা লেখক/প্রতিনিধির চিন্তা ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল সব সময় নাও থাকতে পারে । তাই যে কোনো লেখার জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। ডেইলি খবরের ডাকঘর
about-us contact-us privacy-policy terms-and-conditions
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত খবরের ডাকঘর. কম ©২০১৮ -২০২১||
Leave a Reply