নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘জাকির হোসেন মোল্লা। এক লাখ টাকা। দ্বিতীয়বার এক লাখ টাকা। তৃতীয়বার পাঁচ লাখ এবং চতুর্থবার এক লাখ টাকা।’ বিয়ের পর কানাডায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভনে জাকির হোসেন মোল্লার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া আট লাখ টাকার হিসাব এভাবেই ডায়েরির পাতায় লিখে রেখেছেন সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস।
জাকির মোল্লা একা নন, আরও অনেকেই সাদিয়ার প্রতারণার শিকার। তার বিয়ের ফাঁদে পড়া মানুষের তালিকা এতই দীর্ঘ যে তিনি খুব সম্ভবত সবকিছু স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারতেন না। এ জন্য প্রত্যেকের নাম ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। কবে কখন কার সঙ্গে দেখা করবেন কিংবা দেখা করেছেন, তা লিখে রাখতেন ডায়েরিতে। কার কাছ থেকে কত দফায় কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, সেসব হিসাবও লিখে রাখতেন তিনি।
সাদিয়ার এমন একটি ডায়েরি হাতে পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে তার প্রতারণার কাহিনির পুরো হিসাব নেই এই ডায়েরিতে। ডায়েরিতে মাত্র দু’বছরের, অর্থাৎ ২০১৫ ও ২০১৬ সালের প্রতারণার কাহিনি লেখা রয়েছে। তাতেই দুই শতাধিক মানুষের নাম রয়েছে, যাদের প্রত্যেককে বিয়ের পর কানাডায় নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়েছিলেন এবং মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সাদিয়ার ডায়েরির একটি পাতায় লেখা আছে, কুমিল্লার আনোয়ারের কাছ থেকে চার দফায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা নিয়েছেন। আরেকটি পাতায় লেখা আছে, সানাউল্লাহর সঙ্গে কথা হয়েছে। আবদুল হালিমের সঙ্গে কথা বলার তথ্য আছে আরেক পাতায়। ডায়েরির প্রতিটি পাতায় রয়েছে প্রতারণার এমন কাহিনি।
সিআইডি বলছে, শুধু দুই বছরের হিসাব থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, সাদিয়ার সাত-আট বছরের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে শত শত মানুষ। চক্রে রয়েছে তার দ্বিতীয় স্বামী এনামুল হাসান ওরফে জিহাদ, শাহরিয়ার, ফারজানা ও আবু সুফিয়ান।
চক্রের প্রধান সাদিয়া নিজেকে কানাডার নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন। গত বৃহস্পতিবার বনানী থেকে সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এর পরই তার বনশ্রীর বাসা থেকে ওই ডায়েরিও জব্দ করে সিআইডি।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, সাদিয়া প্রতারণার টাকায় ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় সম্পদ গড়েছেন। কিছু সম্পদের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। তার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বর্তমানে প্রায় এক কোটি টাকা রয়েছে। চক্রের অপর সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে।
সাদিয়ার বাবার বাড়ি কুমিল্লায়। প্রথম স্বামীকে তিনি তালাক দিয়েছেন। প্রায় আট বছর আগে বরিশালের মুলাদী থানার বাহাদুরপুরের বাসিন্দা এনামুলকে বিয়ে করেন। রাজধানীর বনশ্রীতে বসবাস করেন তারা। সাদিয়ার প্রতারণার কাজের প্রধান সহযোগী এনামুল।
‘বয়স্ক পাত্র চাই’ :সাদিয়া নিজে কখনোই কানাডায় যাননি। তার পোশাক-আশাক এবং কথাবার্তায় আধুনিকতার ছাপ রয়েছে। নিজেকে কানাডার নাগরিক বলে লোকজনকে সহজেই বিশ্বাস করাতে পটু ছিলেন তিনি। প্রতারণার জাল ফেলতে পত্রিকায়ও বিজ্ঞাপন দিতেন তিনি। পত্রিকায় বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করতেন, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি সন্তানহীন পাত্রীর জন্য পাত্র প্রয়োজন। পাত্রীর উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। বয়স ৩৭ বছর। কানাডায় তার ব্যবসা রয়েছে। নামাজি পাত্রীর ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্রকে যোগাযোগ করতে বলা হতো। যোগাযোগের জন্য সাদিয়ার মোবাইল ফোন নম্বরও দেওয়া হতো বিজ্ঞাপনে।
প্রথম সাক্ষাৎই হতো অভিজাত রেস্তোরাঁয় :সিআইডি জানিয়েছে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে বিয়ে করতে আগ্রহীরা প্রথমে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে সাদিয়া আগ্রহীদের মন ভুলিয়ে দিতেন। দু-এক দিন কথা বলার পর দেখা করতেন গুলশান-বনানীর অভিজাত রেস্টুরেন্টে। পাত্রকে পছন্দের কথা জানাতেন। কানাডায় তার দুইশ’ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে, এমন বানোয়াট গল্প শোনাতেন। বিয়ের পরই কানাডায় নিয়ে যাবেন- এমন স্বপ্ন দেখিয়ে পাসপোর্ট নিতেন। ভিসাসহ কানাডায় যেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করার নামে প্রথমে এক-দুই লাখ টাকা দাবি করতেন। আগ্রহী ব্যক্তি সহজেই বিশ্বাস করে পাসপোর্ট ও টাকা তুলে দিতেন তার কাছে। এর পর নানাভাবে দফায় দফায় লাখ লাখ হাতিয়ে নিতেন।
সর্বশেষ পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ৭০ বছর বয়সী নাজির হোসেনের কাছ থেকে এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন সাদিয়া। একপর্যায়ে নাজির বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারিত হচ্ছেন। তিনি গুলশান থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় সাদিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার তাকে দু’দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সামিউল্লাহ সামি। নির্বাহী সম্পাদক : মহসিন রায়হান। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আকরাম হোসাইন। সহ-ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : ওমর ফারুক। আইন উপদেষ্টা : মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, এডভোকেট বাংলাদেশ সু্প্রিম কোর্ট ঢাকা।
প্রধান কার্যালয় : ২১৯ মাজার রোড, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬। বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএকে টাওয়ার (৯ম তলা), প্লট নং ১/এ, নিশাত নগর, তুরাগ, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। 📲 মোবাইল : ০১৭১৩৯২৬২৭৭, ০১৭১০১০১৬৯৯। বিজ্ঞাপন : ০১৭৭ ৯৭৪৬৬০৭ ☎️ ফোন : +৮৮০৯৬৩৮১৯২৪।
📧 Email : khoborerdakghar@gmail.com
“দৈনিক খবরের ডাকঘরে” প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখক/প্রতিনিধির। আমরা লেখক/প্রতিনিধির চিন্তা ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল সব সময় নাও থাকতে পারে । তাই যে কোনো লেখার জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। ডেইলি খবরের ডাকঘর
about-us contact-us privacy-policy terms-and-conditions
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত খবরের ডাকঘর. কম ©২০১৮ -২০২১||
Leave a Reply