নিজস্ব প্রতিবেদক : প্লট দেওয়ার নামে শতকোটি লুটে নেওয়া ভয়ংকর প্রতারক ইমাম হোসেন নাসিম ওরফে নাসিমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। স্বল্পমূল্যে প্লট দেওয়ার নাম করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া নাসিম ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। অর্ধশতাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হলেও নিজেকে এক সুড়ঙ্গ রুমে আত্মগোপনে রেখেছিল এই মহাপ্রতারক। অবশেষে র্যাব বুধবার অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় হালিমা আক্তার সালমা নামে তার স্ত্রীকেও আটক করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় একটি ৭.৬৫ মিমি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড গুলি, নগদ জাল এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ১৪শ পিস ইয়াবা, দুই বোতল বিদেশি মদ, চারটি ওয়াকিটকি সেট, ছয়টি পাসপোর্ট, ৩৭টি ব্যাংক চেক এবং ৩২টি সিম কার্ড।
বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রতারক নাসিমের বাবা-দাদার বাড়ি ভোলায়। দেশ স্বাধীনের আগে তার বাবা বেলায়েত হোসেন গ্রাম্য ডাক্তার ছিলেন। তাকে নিয়ে তার বাবা রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে মিরপুর এলাকায় সে পড়ালেখা করে। সে নিজেকে গ্রাজুয়েট দাবি করে। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ বা ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিতাসের তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করে। এরপর ২০০২ সালে নাসিম রিয়েল এস্টেট নামে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গড়ে তোলে। সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় সাইনবোর্ড দিয়ে কিছু খাসজমি, দখল করা জমি এবং পানি ভরা জমি দেখিয়ে স্বল্পমূল্যে জমি পাওয়া যাচ্ছে বলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
তিনি বলেন, প্লটপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে নিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার চুক্তির কথা আমরা জানতে পেরেছি। রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করে এক একজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নিয়েছে। সব মিলিয়ে এভাবে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার কথা জানতে পেরেছি।’
ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার শিকার মানুষদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেত নাসিম। অনেক সময় অস্ত্র ও ওয়াকিটকি দেখিয়ে নিজের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করত। গ্রেপ্তার এড়াতে আন্ডারগ্রাউন্ডে তার গোপন সুড়ঙ্গে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংবলিত দরজাযুক্ত গোপন অফিসে আত্মগোপনে থাকত। নাসিমের অনুপস্থিতিতে তার তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার প্রতারণার ব্যবসা দেখাশোনা করত।
মোজাম্মেল হক আরো বলেন, নাসিম ৫৫টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ভূমিদস্যুতা, মাদক ও জাল টাকা মামলার অর্ধশতাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে স্ত্রীর সহযোগিতায় ইয়াবা ও বিদেশি মদ সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ডিলার ও খুচরা মাদক কারবারিদের কাছে বিক্রি করত। এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল নোটের ব্যবসা পরিচালনা করত।
র্যাব-৪-এর অধিনায়ক আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নাসিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদকসহ প্রতারণার চারটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রতারিত ভুক্তভোগীরা র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। যারা মামলা করতে ইচ্ছুক, র্যাব-৪ তাদের প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইমাম হোসেন নাসিম ওরফে নাসিম তার নিজ নামেই গ্রুপ অব কোম্পানি খোলেন। নাসিম গ্রুপের মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেগুলোর কাজ শুধু প্রতারণাই করা। এগুলো হলো- নাসিম রিয়েল এস্টেট লি., নাসিম ডেভেলপার লি., নাসিম এগ্রো ফুড লি., নাসিম বাজার, এসবি ফাউন্ডেশন, ডা. বেলায়েত হোসেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, নাসিম পার্সেল ও কুরিয়ার সার্ভিস, সাপ্তাহিক ইমারত অর্থ, নাসিম শিপ বিল্ডার্স, নাসিম ইঞ্জিনিয়ারিং ও কনসালটেন্সি, নাসিম ট্রেডিং লি., সাহানা আই হাসপাতাল, বাংলা নিউজ ১৬, নাসিম ড্রিংকিং ওয়াটার, নাসিম রিফাইন্ড সুগার, নাসিম বেভারেজ।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, নাসিম মূলত বিভিন্ন সময় এই সকল কোম্পানির মাধ্যমে প্রতারণা করেই প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন সময় টাকা ফেরত চাইলে তার সহযোগীদের দিয়ে উল্টো হয়রানির করান। এমনকি মামলারও হুমকি দেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে বিশদ তদন্ত শুরু হয়েছে। নাসিমের প্রতারণায় কারা সহযোগিতা করেছেন তাদের বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : সামিউল্লাহ সামি। নির্বাহী সম্পাদক : মহসিন রায়হান। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : আকরাম হোসাইন। সহ-ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : ওমর ফারুক। আইন উপদেষ্টা : মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, এডভোকেট বাংলাদেশ সু্প্রিম কোর্ট ঢাকা।
প্রধান কার্যালয় : ২১৯ মাজার রোড, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬। বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয় : আরএকে টাওয়ার (৯ম তলা), প্লট নং ১/এ, নিশাত নগর, তুরাগ, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। 📲 মোবাইল : ০১৭১৩৯২৬২৭৭, ০১৭১০১০১৬৯৯। বিজ্ঞাপন : ০১৭৭ ৯৭৪৬৬০৭ ☎️ ফোন : +৮৮০৯৬৩৮১৯২৪।
📧 Email : khoborerdakghar@gmail.com
“দৈনিক খবরের ডাকঘরে” প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার লেখক/প্রতিনিধির। আমরা লেখক/প্রতিনিধির চিন্তা ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল সব সময় নাও থাকতে পারে । তাই যে কোনো লেখার জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। ডেইলি খবরের ডাকঘর
about-us contact-us privacy-policy terms-and-conditions
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত খবরের ডাকঘর. কম ©২০১৮ -২০২১||
Leave a Reply